মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৩ পূর্বাহ্ন
প্রিন্স তালুকদার, বাবুগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ, বাঙালী জাতির সূর্যসেনা বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ঘুমিয়ে আছে যে মাটিতে, এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টি নন্দন দুর্গাসাগর অবস্থিত যেখানে তা নিয়েই বরিশাল-৩ আসন। বাবুগঞ্জ-মুলাদী দুইটি উপজেলা নিয়ে বরিশাল-৩ আসন গঠিত। একাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৃনমুলে মাঠ চষে বেড়ানোর ব্যস্ততা ততই বেড়ে যাচ্ছে। ব্যতিক্রম ঘটেনি দখিনের অন্যতম জনপদ, সন্ধ্যা, সুগন্ধা, আড়িয়াল খা ও জয়ন্তী নদীবেষ্টিত বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) নির্বাচনী এলাকায়। ১৬৪.৮৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বাবুগঞ্জ উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন ও ২৩৫.৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মুলাদী উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন এবং ১ টি পৌরসভা নিয়ে বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) নির্বাচনী এলাকা। বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনে সীমানা পূননির্ধারন করে বাবুগঞ্জের সাথে মুলাদী যুক্ত করে বরিশাল-৩ আসন গঠন করা হয়। এর আগে উজিরপুর ও বাবুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে ছিল বরিশাল-৩ আসন। তখন মুলাদী ছিল বরিশাল-৪ আসনে। বরিশাল-৩ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৫৩ হাজার ৫১২ জন। রয়েছে ১৩০টি ভোট কেন্দ্র ও ৫৮৪টি ভোট কক্ষ। এর মধ্যে বাবুগঞ্জ উপজেলায় ১ লক্ষ ১৪ হাজার ৭৫৪ জন ভোটার ও মুলাদী উপজেলায় ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৭৫৮ জন ভোটার রয়েছে । ২০১৪সালের ৫ই জানুয়ারী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৩ আসনে মোট ৫৯,০০৯টি ভোট পড়ে। এর মধ্যে ৩৫,৬০২টি ভোট পেয়েছেন এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ টিপু সুলতান, যা মোট ভোটের ৬০.৩%। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু পেয়েছেন ২৩,৪০৭টি ভোট, যা মোট ভোটের ৩৯.৭%। তবে ভোট গ্রহনের দিন মাঝবেলা না পেরুতেই কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের জন্মভূমি সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দা (বাবুগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের আগরপুর গ্রাম) ও জাপার অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু ২০০৮ সালে বরিশাল-৩ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলাবাসীর মতে, গোলাম কিবরিয়া টিপু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর নদী বেষ্টিত এ দুই উপজেলার সব খেয়াঘাট ও হাট-বাজারের ইজারা প্রথা বাতিল করে জনগনের জন্য ফ্রি করে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি একসময়ের সর্বহারা, সন্ত্রাসী এলাকা হিসেবে পরিচিত দুই উপজেলায় শান্তির সু-বাতাস ফিরিয়ে আনার জন্য রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। ফলশ্রুতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অনায়াসে যেকোন প্রান্তে গাড়ি নিয়ে সহজে যাতায়াত করতে পারায় খুব সহজেই অপরাধ কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যায়। বাবুগঞ্জ উপজেলা জাপার সভাপতি মুকিতুর রহমান কিচলু বলেন, বরিশাল-৩ আসন মূলত জাতীয় পার্টির ঘাঁটি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কতিপয় সুবিধাভোগী নেতার কারসাজিতে কয়েকটি কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম করে আমার নেতাকে (গোলাম কিবরিয়া টিপু) হারিয়ে দেয়া হয়েছে। যার ফল বিগত সময়ে নির্বাচনী এলাকার সাধারন ভোটাররা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। এজন্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারন ভোটারদের অনুরোধে দীর্ঘদিন থেকে নির্বাচনের জন্য মাঠে ময়দানে সাংগঠনিক কাজ করে যাচ্ছি। বাবুগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির তৃনমুলের জননন্দিত যুগ্ন সাধারন সম্পাদক সেলিম হোসেন স্বপন বলেন, বাবুগঞ্জ মুলাদীবাসী লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিতে অপেক্ষা করছে, জননেতা গোলাম কিবরিয়া টিপু ভাইকে ভোট দিতে অপেক্ষা করছে। বাবুগঞ্জ, মুলাদী আসনে গোলাম কিবরিয়া টিপু একটি নাম একটি ইতিহাস। সদা হাস্যোজ্বল এই সাদা মনের মানুষটি নবম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রনে এনে সাধারন মানুষদের শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। নির্বাচনী এলাকার সকল হাট বাজারের খাজনার লক্ষ লক্ষ টাকা সরকারের ঘরে জমা দিয়ে জনগনের জন্য হাট, বাজার, ঘাটের ইজারা মওকুফ করেছিলেন, মুলাদী বাবুগঞ্জবাসীদের বাসযোগ্য একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে জনগনের মনে যায়গা করে নিয়েছেন। সরকারী বরাদ্দ যেমন কাবিখা, কাবিটা, টি আর সহ প্রত্যেকটি বরাদ্দ সুষ্ঠ ও ন্যায় সঙ্গত ভাবে বন্টন করায় মানুষ উক্ত প্রকল্প গুলির নামের সাথে প্রথমবারের মত তার আমলে পরিচিত হয়েছিলেন। দুটি উপজেলার প্রত্যেকটি স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় একাধিকবার বরাদ্দ দিয়েছিলেন। পুলিশ বাহিনী, প্রাইমারী শিক্ষক সহ বিনা টাকায় বহু চাকুরী হয়েছে তার আমলে। অবকাঠামো উন্নয়নের আওতায় অনেক স্কুল কলেজ মাদ্রাসার নতুন ভবন নির্মিত হয়েছিল।অসংখ্য রাস্তা, ব্রীজ, কালভার্ট, খালখনন সহ বহু উন্নয়ন মূলক কাজ হয়েছিল। সন্ত্রাসমুক্ত এলাকায় জনগন পরম সুখে ও শান্তিতে বসবাস করেছিল। উপজেলা প্রশাসন, থানা প্রশাসন স্বাধীন ভাবে কাজ করেছেন। তার পাঁচ বছরের শাষন আমলে একটি রাজনৈতিক মামলাও হয়নি। সহমর্মিতার রাজনীতি করেছেন সর্বদা। শান্তি ও সম্প্রতি বিরাজ ছিল সর্বত্র। একজন মহান দেশ প্রেমিক, স্বচ্ছ রাজনীতির রুপকার তিনি। বাবুগঞ্জ মুলাদী এলাকা জাতীয় পার্টির ঘাটি, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে টিপু ভাইকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে হবে। বাবুগঞ্জ উপজেলা জাতীয় যুব সংহতির সাধারন সম্পাদক সোহেল হাওলাদার বলেন, জননেতা টিপু ভাইকে বিজয়ী করতে সবাইকে দক্ষভাবে কাজ করতে হবে। নির্বাচনের ফলাফল পর্যন্ত রাত দিন সবাইকে কাজ করতে হবে, ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যেতে হবে। এখন হাত বাড়ালেই নেশা সামগ্রী পাওয়া যায়, আর তিনি এমপি থাকাকালীন সময়ে এলাকা মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করেছিলেন। মুলাদী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মির্জা আবদুল্লাহ হারুন বলেন, দলের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি থাকাকালীন পুরো নির্বাচনী এলাকায় অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কার্লভার্ট, স্কুল, কলেজসহ এমন কোন স্থান নেই, যেখানে তার উন্নয়নের ছোয়া লাগান নাই। তিনি এলাকার সুষম উন্নয়ন করেছেন। এরপর চোখে পরার মতো আর কোন উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি। যেকারণে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে দলের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপুর কোন বিকল্প প্রার্থী নেই। এ আসনের সাবেক এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, বাবুগঞ্জ ও মুলাদীতে জাতীয় পার্টি এখন তৃণমূল পর্যায়ে অনেক সুসংহত। গত নির্বাচনে একজন মন্ত্রী প্রভাব খাটিয়ে তার দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করেছেন। নির্বাচনের দিন দুপুর ১২টায় ভোট বয়কট করেছিলাম। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শক্তভাবে যে কোনো কূটকৌশল মোকাবেলা করা হবে।
Leave a Reply